১.
ভালোবাসা গাছে, নানা রঙের ফুল, নানা রঙের ফল,
কোনটা মিষ্টি কোনটা ঝাল, কোনটা কালো কোনটা লাল,
কোনটার রং, নীল বিষ ময়।
মধু বীণে, বিষ ফলে, পানি বীণে বিফলে;
মানবতা ফল ধরে যে, প্রেম কল্প তরু সে।
২.
যদি ফিরে চাই তোমায় এক সন্ধ্যায়,
এই মনে ভয়, অযথাই ঝড়ো হাওয়ায়;
এইসব ভেবে, ভেবে ভেবে, দিন চলে যায়,
কুয়াশাচ্ছন্ন, বিষন্ন সবই যে বৃথা।
যদি চেয়ে থাকি তোমার ওই দুটি চোখে,
আটলান্টিক সাগর, ঢেউয়ে ঢেউয়ে,
সুনামি হয়ে এলে তুমি তাই সমতলে,
ফেরাতে পারিনি আজ নিজেকে।
৩.
ভিন্ন ভিন্ন জাতি দেখি, কে বানাইলো ভিন্ন ভাষী;
মুখে বলি ধর্ম মানি, অন্তরালে বিভেদ বাণী;
অবিশ্বাসে পাহাড় ধসে, নদী শুকায়, মেঘ হয়ে।
কালচারাল ডাইভারসিটি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি;
সহিষ্ণুতা পরমতে, সবার উপর মানুষ সত্যি।
৪. দাউ দাউ দাবানল নয় আশার আলো দাও, আমার সামনে থেকে তুমি অন্ধকার সরাও, দাউ দাউ দাবানল নয় আশার আলো দাও, আগুন দিও না বন্ধু আশার আলো দাও; দুঃখ ধরার ভরা স্রোত আনন্দ মেলাও।
৫. নতুন শব্দ সৃষ্টি করা কবিত্ব; শব্দকে নতুন অর্থ দেয় নতুনত্ব।
৬. সৃষ্টির নিয়ম নাই, সৃষ্টি করতে পার যা খুশি তাই, সৃষ্টিধর বলে তাই, নিদর্শনের শেষ নাই, সৃষ্টি করতে পার যা খুশি তাই, সিমা নাই চিহ্নিত।
৭. যখন সৃষ্টি করার সময় ছিল না, তখনই সৃষ্টি হয়েছিল সুন্দর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি খানা। যখন দৃষ্টি ফেলার সময় থাকে না, তখনই যায় দেখা অসম্ভব সুন্দর শ্রেষ্ঠ দিন খানা।
৮. সময়ের গাড়ি চলে, না ফেরা ভবিষ্যতে, বর্তমান যাচ্ছে; যেতে যেতে যেতে যেতে, বৃদ্ধাঙ্গুলি তুলে- সৃষ্টি’র পথে।
৯. চুরি হয়েছে অনেক লাইন আমারও, অনেক কবির মত; কবিকে লিখতে দাও কবিতা গুচ্ছ; কবিতা না হলে হবে কবিতার ঘাতক।
১০. সকল কবি ভালবাসে নিজস্ব ভাষাতে, সঙ্কীর্ণতা নাই আজ কোনও ভাষাতে। ফেব্রুয়ারীর একুশ তারিখ প্রভাত ফেরিতে, বুনন হয় সবার ভাষা বাংলা ভাষার সাথে। সকল কবি ভালবাসে নিজস্ব ভাষাতে।
১১. নিজস্বতা টিকে থাকে সকল ভাষাতে। অসচ্ছতা নাই কোন নতুন মতে বা পথে; নিজস্বতা টিকে থাকে মত পার্থক্যে, সম্মান দিতে জানতে হয় ভিন্ন মতে, সকল কবি ভালবাসে সকল ভাষাতে।
১২. তোমার মুখ নিস্তব্ধ আমার মুখের মত, তোমার কাছে জমা আছে আকাংখা যত, আমার কাধের পর আছে রক্ত রঙ্গীন ক্ষত, ব্রুক্লিন থেকে ব্রঙ্কস পর্যন্ত, দেখতে পার নিস্তব্ধ প্রতিফলন কত, ইস্ট রিভার নদীর পাড় বিচিত্র জাতিসংঘ! তোমার মুখ নিস্তব্ধ আমার মুখের মত। হারায়ে জল শুকায় যে নদী, আমি তার মত। তার চেয়েও হয়ত আমি হয়েছি বেশি আহত।
১৩. অভিমান এর অনেক রূপ। কথা যুদ্ধ। কুৎসিত নিরবতা। অভিমান এক ধরনের ভাষা আর দশা।
১৪. বিনয় একটা নদীর মত, ব্রহ্মে বিচরণ করার আনন্দ। নাই কোন ক্ষত। বিনয় নদীর মত, মহত্তের দাবিদার লোকজন হয় বিনীত; এই বিনয় নদীর মত। আছে শুধু সময় ও স্রোত। ঊংডে য়াহ হো।
১৫. হাডসন নদীর রূপ দেখে মনে পরে, বংশী নদীর কালো পানি সাভারে। জট দেখেছি গাছে, বটের শিকড়ে, সন্ধ্যা রাতে, নদীর কুলে- হাওয়া, নৌকা করে ঘুরতে যাওয়া- আহারে, হে নদী আমি ভালবাসি তোমারে। আমার মতো তোমারে ডেকে কে শুধায়, নিউ ইয়র্ক নগরে।
১৬. মহিকণ্টক একটি নদী। এই নদী ইতিহাসের অবাধ গতিময়তা হরণ করে নেমেছে নিচে পাহাড়ী খাদ ধরে, দুই মুখী স্রোতে টানা পোড়েন চলে, এই নদীর জলে; অবিরাম তৃষ্ণা সেই কথাটাই বলে। এই নদী প্রিয় অতি, মহিকণ্টক নামে ডাকে এলগোনকুইন ভাষী।
সংস্কৃত যেমন প্রাচীন ভারতীয় ভাষা অন্তর্ভুক্ত, ঠিক তেমনি প্রাচীন আমেরিকান আদি ভাষা-আলগোনকুইন ভাষা। নিউ ইয়র্ক আর নিউ জার্সি ‘র সীমান্তে মোহক, মেহিকান, ওনোন্দাগা, ওপিগনার, লেনাপি – বিভিন্ন গোত্রের মানুষ এলগোনকুইন ভাষায় কথা বলতো। তারা হাডসন নদীর তীরে বাস করতো, তারা দেখতো জোয়ারের সময় আটলান্টিকের লবনাত্মক পানি ম্যানহাটনের দক্ষিণ থেকে প্রবাহিত হয়ে উত্তরে অবস্থিত নিউ ইয়র্কের রাজধানী আলবানী’র ট্রয় উপনগর পর্যন্ত যায়। নিউ ইয়র্ক থেকে উত্তরে আডিরন্ডক পর্বতমালায় অবস্থিত টিয়ার্স ওব ক্লাউড নামক লেক থেকে প্রসারিত হয় স্বচ্ছ পানি প্রবাহ। একই নদীতে দুইটি জলধারা- লবনাক্ত ও স্বচ্ছ পানি প্রবাহ! নিউইয়র্ক শহরের হাডসন নদীর আদি নাম মহিকণ্টক। ‘মহিকন্টক’ আমেরিকার এলগোনকুইআন নামক আদিবাসীদের ভাষা-অন্তর্গত শব্দ। এলগোনকুইন ভাষায় মহিকণ্টক অর্থ দুই দিকে প্রবাহিত নদী; নদীর এই দুই ধারা উভয় দিকে প্রবাহিত হয় একই সময়ে।
আমেরিকান সমাজ দেখার, এবং বাংলা সংস্কৃতির সেতুর সাথে যুক্ত থাকার ফসল ‘মহিকন্টক’।