🐷 স্বপ্নদ্রষ্টা শুকরের ডাইরি

জর্জ অরওয়েল এর লেখা উপন্যাস এনিম্যাল ফার্ম এ নেপোলিয়ন নামে এক বুদ্ধ্বিমান শূকর ছিল। তার দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা এই ডায়রি, শুকরের ডায়রি।

তারিখ: ভুলে গেছি। কারণ এখন সময় চলে না ঘড়ির মতন। ইতিহাস মনে রাখেনা আমাদের। বিপ্লব চুরি হয়ে যাওয়া ঠান্ডা মূল্যবোধের তালে চলে দিনের কাজ কাম। এক সময় বিপ্লবের নায়ক মানুষদের তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। কারণ ওরা শুধু বসে থাকতো। ভোগ করত। আর আমরাই চাষ করতাম। বাড়ি বানাতাম। দুধ দিতাম। বাচ্চা জন্মাতাম।

গত রাতে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি। আবার ফিরে গেছি লন্ডনের লর্ড জর্জ অরওয়েল এর এনিম্যাল ফার্ম এ যেখানে বুদ্ধিমান শূকরেরা বিদ্রোহ করে মানুষদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। আমরা বলেছি মানুষ অলস। কিছুই তৈরি করে না।

তিন হাজার ছানা কে খেয়ে ফেলেছে মানুষ। হ্যা, ঠিক শুনেছ। আমার সন্তানেরা এক এক করে মানুষের খাবার পাত্রে উঠেছে। কোথাও কোনো ছবি নেই। কোনো স্মৃতি নেই। শুধু নিস্তব্ধতা। কসাইখানার গন্ধ। আমি এখন ফার্মএর সামনে। এখানে একটি বাড়তি ঘর আছে। কেউ কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে এই জায়গা ভাড়া করে বাস করবে। এক দম্পতি, বললো তাদের সন্তান আসছে। শুনে আমার বুক ধ্বক করে উঠলো। এই জায়গায়? এখানে শিশুর কান্নায় দেয়াল সাড়া দেয়না। আমিতো জানি মানুষ কিভাবে ছেলে মেয়েদের খরচ হিসাবে দেখে এবং দেখায়। তারপর এলো এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক, মিস্টার জোনস। তার হাত কাঁপে। মুখে দাঁড়ি। চোখে ইতিহাস। তার সঙ্গে তার বোন। দয়া আর মর্যাদার গন্ধ তাদের মধ্যে। কিন্তু আমি জানি- হাডসন এর ঠান্ডা বাতাস তাদের হাড়ে কাঁপুনি আনবে। আর কেউ জিজ্ঞাসাও করবে না তারা কেমন আছে।

এনিম্যাল ফার্ম এ বুদ্ধিমান শূকরেরা যেদিন বিদ্রোহ করে মানুষদের তাড়িয়ে দিয়েছিল সেদিন শূকরদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল নিরাপদ আশ্রয়ের। বাস্তবে তারা পেলো নির্জনতা। দেখ- বয়স্ক শূকরেরা ঠান্ডা বার্নে কোনার দিকে চলে গেছে। দেয়াল ফাটা। বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে হাড়। আমি বুঝলাম প্রতিশ্রুত ভাড়ার ঘরটি দুর্বলদের জন্য নয়। না জীবনের শুরুতে, না জীবনের শেষ দিকে। না শিশুদের, না বৃদ্ধদের। এই মুহূর্তে সীমান্তের উত্তরে মানুষদের নিয়ন্ত্রণে সৃষ্ট কৃত্রিম ঢলে মারা যাচ্ছে অজস্র পরিশ্রমী ঘোড়া আর গরু।

নোট : শুকরের গান

বুক পেতে মরে গেছে কত মেধাবী রাস্তায়, 

চোখের মণি বেচনা জননী জন্ম যদি বাংলায়,

বিপ্লব বিক্রয় কোরোনা তুমি এতো সস্তায়।।

নেই আলো অন্ধকার নৈরাজ্য সরকার,

সংবিধান লঙ্ঘন করে হয়েছে স্বৈরাচার;

নেই আলো অন্ধকার নির্লজ্জ স্বৈরাচার,

বলেছিল রাজাকার, রাজা কার রাজা কার;

নেই আলো অন্ধকার মন্ত্রী কত দুরাচার,

স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক;

বিপ্লব বিক্রয় কোরোনা তুমি এতো সস্তায়।।