পিতৃত্ব মাতৃত্ত্ব নীরব সংগ্রাম,
শিক্ষা এক অসমাপ্ত ব্রত,
আর কবিতা— যার মধ্যে
প্রতিদিন মরে গিয়ে বাঁচি।
এখানে Hudson River আমাদের নতুন সঙ্গী।
Hudson-এর বুকেও আমরা খুঁজে পাই
Turag-এর স্রোত, সুরমার ঢেউ, ইছামতির স্মৃতি।
গল্প:
সকালটা অন্যদিনের মতোই শুরু হয়েছিল। খুপরি রোদের ভিতর দিয়ে পায়ে ক্রোক স্যান্ডেল জোড়া গলিয়ে স্কুলের দিকে এগোচ্ছিলেন ম্যাডাম। শহরতলির এই প্রাইমারি স্কুলটায় তিনি গত দশ বছর ধরে পড়াচ্ছেন। জীবন সহজ ছিল না তার—স্বামী বহু আগেই ছেড়ে গেছেন, এক মেয়ে আছে—কলেজে পড়ে, আর সংসার চলে এই শিক্ষিকার মাসিক বেতনে।
স্কুলের ফটকের সামনেই আচমকা ঘটে গেল ঘটনাটা। পায়ে থাকা ক্রোক স্যান্ডেলটা হঠাৎ পটকানি খেল। হালকা ভিজে সিমেন্টের উপর পা পিছলে পড়ে গেলেন তিনি। বাম কনুইয়ে ব্যথা পেলেন, ঘাড়টা চোট খেলো সামান্য, আর হাঁটু লজ্জায় লাল।
মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু ছাত্র-ছাত্রী দৌড়ে এল, “ম্যাডাম! ম্যাডাম! আপনি ঠিক আছেন?”
তিনি ব্যথা চেপে হাসলেন, বললেন, “আছি রে, পড়ে গেলাম একটু, চল দেখি উঠি।”
কিন্তু সেই হাসির আড়ালে ছিল এক কঠিন মানসিক লড়াই।
নিজেকে বলছিলেন, “এইটুকুতে ভেঙে পড়লে চলবে? আমি তো একা নই, আমার উপর অনেক শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করে।”
তিনি উঠে দাঁড়ালেন। কনুইতে রক্ত লেগেছে, তবু বললেন, “চলো, ক্লাসে যাই। আজ তোমাদের নতুন গল্প পড়াব।”
স্কুলে ঢুকে ক্লাসরুমে গিয়ে শুরু করলেন morning meeting । চোখে যন্ত্রণা, পায়ে ব্যথা, কিন্তু মন অটুট।
এই দৃশ্যটা শুধু একজন শিক্ষিকার পড়ে যাওয়া নয়, এটা একজন নারীর সমাজে টিকে থাকার প্রতীক।
এই ঘটনায় শিক্ষিকার সংগ্রাম শুধু একজোড়া অযোগ্য স্যান্ডেলের কারণে শরীরের আঘাত নয়, বরং এক সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিদিন টিকে থাকার লড়াই। যেখানে নারীর পদক্ষেপ, পোশাক, এমনকি পড়ে যাওয়া পর্যন্তও বিচার করা হয়।
পরের দিন স্কুলের কয়েকজন অভিভাবক এসে বলল, “ম্যাডাম, আপনাকে দেখে আমাদের মেয়েরা শিখছে কীভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়।”
তিনি বুঝলেন, কখনো কখনো একজোড়া স্যান্ডেলও বদলে দিতে পারে গল্পের মোড়।
মূল ভাব: এই ঘটনা শুধু একটি ছোট দুর্ঘটনার বর্ণনা নয়—এটা একজন শিক্ষিকার আত্মবল, মানসিক দৃঢ়তা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবি। ছোট ছোট মুহূর্তেই লুকিয়ে থাকে বড় বার্তা।