মৈমনসিংহ গীতিকা

‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ একটি সংকলনগ্রন্থ যাতে ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রচলিত দশটি পালাগান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই গানগুলো প্রাচীন কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছে।

১৯২৩ থেকে ৩২ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন এই গানগুলো অন্যান্যদের সহায়তায় সংগ্রহ করেন এবং স্বীয় সম্পাদনায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রকাশ করেন। তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনা মহকুমার আইথর গ্রামের আধিবাসী চন্দ্রকুমার দে এসব গাথা সংগ্রহ করছিলেন। এই গীতিকাটি বিশ্বের ২৩টি ভাষায় মুদ্রিত হয়।

১৯১৬ সালে ময়মনসিংহের কবি চন্দ্রকুমার দে প্রথম সেই এলাকার প্রচলিত পালাগান বা গাথাগুলি সংগ্রহ করেছিলেন ৷ আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের উৎসাহে তা পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় ৷ এই সমস্ত পালা ময়মনসিংহ গীতিকা নামেই পরিচিতি লাভ করে ৷ ১৯৬৬ নাগাদ ক্ষিতীশ মৌলিক (প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা) এই ময়মনসিংহের পালাগুলির আরও একটি সম্পাদিত রূপ প্রকাশ করেন | প্রকাশিত হবার পরেই এই গাথাগুলি রসিক সমাজে প্রভূত সমাদর লাভ করে ৷ কাব্যগুণ, সরলতা, বাংলার পল্লি জগতের সুর-রস–ঘ্রাণে সমৃদ্ধ এই সকল পালা, বাংলার লোক সাহিত্যের এক নতুন দিক খুলে দেয় ৷ এর প্রাচীনতা নিয়ে পণ্ডিতেরা এখনও সহমত পোষণ করতে পারেন নি ৷ লোক সাহিত্য বলা হলেও এই পালাগুলির বিশেষ বিশেষ কবিদের লিখিত রচনা ৷ তাই এগুলি কোন সমাজের সাধারণ সম্পত্তি নয় ৷ লোকমুখে ফিরে ফিরে, সংগ্রাহক, সম্পাদক এবং প্রকাশকদের হাত পড়ে যে এগুলি নিজের প্রাচীনতা ও স্বকীয় বিশিষ্টতা অনেকটাই হারিয়েছে তাতে সন্দেহ নেই ৷

ড. দীনেশচন্দ্র সেনের উদ্যোগে এবং স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের আনুকূল্যে চন্দ্রকুমার দে ময়মনসিংহ গীতিকা সংগ্রহ করেন। চন্দ্রকুমার দে ১৮৮৯ সালে নেত্রেকোণার অন্তর্গত আইথর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার পূর্বাংশে নেত্রেকোণা, কিশোরগঞ্জের বিল, হাওর ও বিভিন্ন নদনদী প্লাবিত বিস্তৃত ভাটি অঞ্চল থেকে বাংলার এই শ্রেষ্ঠ গীতিকাগুলো তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে মহুয়া, মলুয়া, কমলা, চন্দ্রাবতী ও জয়চন্দ্র, ঈশাখা দেওয়ান, দস্যু কেনারাম, রূপবতী, ফরোজ খাঁ দেওয়ান, মহরম খাঁ দেওয়ান, দেওয়ান ভাবনা, ছুরত জামাল ও আধুয়া সুন্দরী, কাজল রেখা, অসমা, ভেলুয়া সুন্দরী, কঙ্ক ও লীলা, মদনকুমার ও মধুমালা, গোপিনী কীর্ত্তন, দেওয়ানা মদিনা, বিদ্যাসুন্দর প্রভৃতি পালাগানগুলো বর্তমান যুগেও অত্যন্ত জনপ্রিয়।।

ময়মনসিংহ গীতিকা উদাহরণ –

নয়া বাড়ী লইয়ার বাইদ্যা লাগাইল বাইঙ্গন,

সেই বাইঙ্গন তুলতে কইন্যা জুড়িল কাইন্দন গো জুড়িল কাইন্দন ।।

কাইন্দ না কাইন্দ না কইন্যা না কান্দিয়ো আর,

সেই বাইঙ্গন বেইচ্যা দিয়াম তোমার গলায় হার গো তোমার গলার হার ।।

নয়া বাড়ী লইয়ার বাইদ্যা লাগাইলো কচু,

সেই কচু বেচ্যা দিয়াম তোমার হাতের বাজু গো তোমার হাতের বাজু ।।

নয়া বাড়ী লইয়ার বাইদ্যা লাগাইলো কলা,

সেই কলা বেইচ্যা দিয়াম তোমার গলার মালা গো তোমার গলার মালা ।।

নয়া বাড়ী লইয়ার বাইদ্যা বানলো চৌকারী,

চৌদিকে মালঞ্চের বেড়া আয়না সারি সারি গো আয়না সারি সারি ।।

হাস মারলাম কইতর মারলাম মাইছ্যা মারলাম টিয়া।

বালা কইরা রাইন্দো বেগুন কালাজিরা দিয়া গো কালাজিরা দিয়া ।৷

জল ভর জল ভর সুন্দরী কইন্যা

জলে দিছ ঢেউ 

হাসি মুখে কওনা কথা

সংগে নাই মোর কেউ…… 

প্রান আমার যায়…  যায় রে….।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © 2024 Educator's Note | Audioman by Catch Themes