সাপ ইঁদুর

“-তোমার মধ্যে বিষ নেই, তাই তুমি অত্যন্ত দূর্বল।” 

সাপ ইঁদুরকে ফিসফিস করে বললো।

“-যার মধ্যে যতো বিষ রয়েছে, পৃথিবীতে সে ততো সম্মান পেয়ে থাকে।” 

“-বিষ থাকলে, তবেই ক্ষমতা দখল করতে পারবে। মনে রেখো, তোমার বিষ তোমার জন্য অমৃত স্বরূপ।” 

ইঁদুর মনোযোগ সহকারে শুনে চলেছে।

-“তোমার মধ্যে বিষ থাকতে হবে। তবেই তুমি সম্মান পাবে। তবেই তোমাকে সকলে ভয় করবে।” 

সাপ মোহময়ী সুরে বলে চলেছে।

বিষয়টি ইঁদুর অনুধাবন করে, সে বুঝতে পারে,, বিষ নাহলে জীবন অপূর্ণ। 

-“তাহলে আমার কি করা উচিত ?” 

নিরীহ ইঁদুর প্রশ্ন করে।

-“একেবারে সহজ উপায়, তোমার অন্তরে বিষ তৈরী করতে হবে।” 

– “সে নাহয় হলো। কিন্তু,, নিজের ভিতরে বিষ তৈরী করবো কিভাবে?” 

ইঁদুর অতি-উৎসাহী হয়ে পড়ে। যেভাবেই হোক বিষ তৈরী করতে হবে।

-“তুমি চাইলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি!” 

সাপ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে।

-” কিভাবে ?” 

-” তুমি চাইলে আমার কাছ হতে বিষ নিতে পারো। আমি তোমাকে বিষ দিতে প্রস্তত।” 

শক্তি-ক্ষমতা-সম্মানের জন্য লালায়িত ইঁদুর তৎক্ষণাৎ রাজী হয়ে পড়ে। সাপ ইঁদুরের সম্মতি দেখে মনে মনে হেসে ওঠে।

এরপর ইঁদুরের সম্মতিক্রমে তার শরীরে সাপ নিজের বিষ ছড়িয়ে দেয়। রক্তের সঙ্গে মিশ্রিত বিষ, ইঁদুরের শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ে। যন্ত্রণায় সে কাতরাতে থাকে। তার পুরো শরীর বিষের কারনে নীল হয়ে পড়ে। ইঁদুর চিরতরে শান্ত হয়ে গেলো।

ইঁদুরের ডেডবডি মুখে নিয়ে সাপ জনসভার দিকে এগিয়ে চলে। সেখানে হাজার হাজার সাপ অপেক্ষা করে চলেছে। সকলে মিলে সাপকে হর্ষ-উল্লাসে স্বাগত জানাতে থাকে।

ইঁদুরের ডেডবডি দেখে সমস্ত সাপ আনন্দিত, সম্মিলিত ভাবে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে পড়েছে সাপেদের শ্লোগানে।

সভা শুরু হলো।

-” বন্ধুগণ, আমার প্রিয় বন্ধুগণ ।” 

সমস্ত সাপ মনোযোগ সহকারে শুনে চলেছে।। চারিদিক নিস্তব্ধ, কোথাও কোনো শোরগোল নেই।

-“বন্ধুরা, আমি যেভাবে আপনাদের কাছে কথা দিয়েছি,, ঠিক সেভাবেই নিজের কার্য সম্পন্ন করেছি।” 

ইঁদুরের ডেডবডি সকলের উদ্দেশ্যে দেখিয়ে বলে – “দেখুন, রেজাল্ট আপনাদের সামনে। কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না।” 

সমস্ত সাপ ফোঁস ফোঁস করে তাকে সমর্থন জানিয়ে দিলো।

সাপ বলতে থাকে – “বন্ধুরা ,, আমরা আগে থেকেই অনেক বদনাম হয়ে রয়েছি। নতুন করে আর বদনামের ভাগীদার হতে চাইছি না। দেখুন বন্ধুরা ,, আমি এই কাজ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করেছি।” 

— “আমার উপরে কেউ দোষারোপ করতে পারবে না। কারণ, ইঁদুর নিজেই আমার কাছে বিষ চেয়েছে,, আমি তার চাহিদা পুরণ করে দিয়েছি।” 

একথা বলে সাপ নিজের লকলকে জিভ বের করে নানারকম অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে।

সমস্ত সাপ দীর্ঘক্ষণ ধরে ফোঁস ফোঁস শব্দে তাকে সম্মতি জানিয়ে চলে।

-“বন্ধুরা ,, প্রথমে লক্ষ্যবস্তুর হৃদয় বিষাক্ত করে তুলতে হবে।” 

– “সেই বিষ ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে পৌঁছে যাবে। মস্তিষ্ক হতে শিরায় শিরায় বিষ ছড়িয়ে পড়বে। সে অস্থির হয়ে উঠবে।” 

সমস্ত সাপের দল মনোযোগ সহকারে শুনে চলেছে।

– “আমরা স্বপ্ন এবং ভয়,, দুটো হাতিয়ার একসাথে প্রয়োগ করে যাবো। “ভালো দিনের স্বপ্ন দেখাতে হবে,, সঙ্গে সঙ্গে ” ভয়ঙ্কর বিপদের ” ভয় দেখিয়ে যেতে হবে।” 

-“বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নন-ইস্যু গুলো,, ইস্যু হিসেবে তুলে ধরতে হবে। যাতে তারা আসল ইস্যু হতে মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারে।” 

সাপ নিজের মুখে ইঁদুরের ডেডবডি তুলে নিয়ে বলে – “দেখুন,, কিভাবে স্বেচ্ছায় সে আমাদের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিয়েছে। কিভাবে সে নিজের শরীর নীল করে ফেলেছে।” 

সমস্ত সাপ ইঁদুরের নীল রঙের মৃতদেহ দেখে উৎফুল্ল হয়ে পড়ে। তারা নিজেদের মধ্যে অজানা এক রোমাঞ্চ অনুভব করতে থাকে।

সাপ বলে চলেছে – “বিষ ভরতে থাকুন। বিষাক্ত করে দিন সমস্ত শরীর। কিন্তু, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, উপদেশের ছলে,, শান্তির পক্রিয়ার মাধ্যমে। ধীরে ধীরে, একটু একটু করে বিষ ভরে দিন…” 

-” দেখবেন,, উপদেশ উন্মাদনা হয়ে উঠবে। এভাবেই আমাদের নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। দেখবেন,, গোটা দেশ সর্পময় হয়ে উঠেছে। সেদিন অত্যন্ত সন্নিকটে, যেদিন দেশের মধ্যে  কেবলমাত্র সাপ ছাড়া অন্য কিছু থাকবে না।” 

এক বৃদ্ধ সাপ উত্তেজিত হয়ে ফোঁস ফোঁস করে বলে – “বুঝেছি,, আমাদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গণতন্ত্র-কে খতম করে,, সাপের রাজ্য সাপত্ব কায়েম করতে হবে।” 

-‘মুরুব্বী ঠিক বলেছেন। আমিও ঠিক এটাই বোঝাতে চাইছি।”

সাপ সম্মতির সুরে মাথা নেড়ে বলে।

দ্বিমত পোষণকারী এক যুবক সাপ উঠে বললো – “দেখুন,, ইঁদুর মায়াজালে ফেঁসে গেছে,, কিন্তু,, সকলে এভাবে ফেঁসে যাবে তার গ্যারান্টি কোথায় ??” 

-“ভেরী গুড কোয়েশ্চন।।” 

একথা বলে সাপ বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে পড়ে। 

এরপর মাথা ঝাঁকিয়ে বলে – “যতক্ষণ নিজেদের মধ্যে আধিপত্যবাদের অনুভূতি বিরাজমান থাকবে,, ততক্ষণ কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করছি না। বর্তমান সময় আমাদের জন্য এক গোল্ডেন-পিরিয়ড। বর্তমান সময়ে সবাই একে অপরের উপর আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে।। আমাদের সুযোগ কাজে লাগিয়ে,, এগিয়ে যেতে হবে।” 

এই কথা শুনে সমস্ত সাপের মধ্যে খুশীর লহর বয়ে গেলো।

-“বন্ধুগণ, কেবলমাত্র গর্ব বিক্রি করতে হবে। শ্রেষ্ঠত্বের স্বপ্ন দেখিয়ে যেতে হবে। শ্রেষ্ঠ হওয়ার স্বপ্ন তাদের ধ্বংস করে দেবে। একদিন সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের প্রথম টার্গেট হলো ইঁদুর। আপাতত ইঁদুর শেষ করতে হবে। আমরা ছুঁচো,, নেউল,, বেঁজী,, গোসাপ,, ব্যাঙ,, বিচ্ছু,, সকলকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাব। প্রথম টার্গেট শেষ হলে দ্বিতীয়,, তারপর তৃতীয়,, চতুর্থ,, পঞ্চম,, এভাবে সকলকে শেষ করে দেবো।” 

চারিদিকে হর্ষধ্বনিতে উত্তাল গোটা সর্পসভা। সবাই সাপের নামে ধন্য ধন্য করে চলেছে।

সাপের স্বপ্ন,, সর্পরাজ্য গঠন করা। যে রাজ্যে বিষহীন ছোটজাতের সাপের কোনো জায়গা থাকবে না। কেবলমাত্র বেশকিছু বিষধর সাপ নিজেদের রাজত্ব,, নিজেদের প্রভুত্ব কায়েম রেখে যাবে। যেখানে অন্য কারো জায়গা থাকবে না।

সর্বসম্মতিক্রমে সাপেদের নেতা নির্বাচিত হয়ে গেলো। বড়ো ফুলের মালা পরে,, ইঁদুর মারা বুদ্ধিমান সাপ বলে ওঠে –

 “বন্ধুগণ, পথ দেখিয়ে দিলাম,, আর বসে থাকা চলবে না। এখনই কাজে লেগে যেতে হবে।গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে,, গণতন্ত্র হত্যা করার কাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © 2024 Educator's Note | Audioman by Catch Themes