নিচে “ওয়াইয়া ও স্মৃতির আগুন” গল্পটি একটি শিশুদের উপযোগী নাট্যরূপে (স্কুল থিয়েটারের জন্য) বাংলায় লেখা হলো। এতে সংলাপ, দৃশ্য নির্দেশনা এবং চরিত্রভিত্তিক উপস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।
নাটকের নাম: ওয়াইয়া ও স্মৃতির আগুন
উপযোগী: শিশুদের নাট্য পরিবেশনার জন্য
সময়কাল: ২০-২৫ মিনিট
চরিত্রসমূহ:
ওয়াইয়া – সাহসী মেয়ে দাদি – গল্প বলা বয়স্কা ছায়া সাপ – অন্ধকার ও ভুলে যাওয়ার প্রতীক তিনটি বজ্র পাখি – আকাশ, পৃথিবী ও আত্মার প্রতীক গাছ, নদী, হরিণ, বাতাস – পরিবেশের প্রতীক চরিত্র গ্রামের শিশু ও বড়রা – পার্শ্ব চরিত্র
দৃশ্য ১: গ্রামের মাঠে – স্মৃতির আগুনের চারপাশে
(মঞ্চের কেন্দ্রে একটি কৃত্রিম আগুন। শিশুরা তার চারপাশে বসে। ওয়াইয়া ও দাদি সামনের সারিতে। পরিবেশ শান্ত, পাখির আওয়াজ)
দাদি (গান গাইতে গাইতে):
আমাদের গল্পের আগুন, জ্বলুক চিরকাল,
মাটির কথা ভুলে গেলে, হারাবে কাল।
ওয়াইয়া (উত্সুক হয়ে):
দাদি, কেন আমরা আগুনের পাশে বসি?
দাদি (হেসে):
এই আগুন আমাদের স্মৃতি, মা। আমাদের গান, গল্প আর ইতিহাস এখানেই জ্বলছে।
(আলো ধীরে ধীরে কমে আসে, পেছনে ছায়া সাপের আগমন)
দৃশ্য ২: অন্ধকার নেমে আসে
(ছায়া সাপ ধীরে ধীরে আগুনের কাছে আসে ও সেটি “চুরি” করে। শিশুরা ভয় পায়। মঞ্চে কুয়াশা ও নীল আলো)
ছায়া সাপ (ফিসফিস):
ওরা বেশি মনে রাখে। ভুলে গেলে, আমিই রাজা!
(আগুন নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়)
(সব চরিত্র হতভম্ব।)
ওয়াইয়া:
আমার বুক ভারী লাগছে, দাদি।
দাদি (কাঁপা গলায়):
আগুন নেই… স্মৃতি হারিয়েছে…।
দৃশ্য ৩: বজ্র পাখিদের আগমন
(আকাশ থেকে বজ্র শব্দ, তীব্র আলো। তিনটি শিশু বজ্র পাখির সাজে মঞ্চে প্রবেশ করে)
বজ্র পাখি ১:
ওয়াইয়া, তুমি শুনছ?
বজ্র পাখি ২:
তুমি পারো স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে।
বজ্র পাখি ৩:
তোমার হৃদয়ে আগুনের সুর আছে।
ওয়াইয়া (ধীরে মাথা নাড়ে):
আমি যাব, আমি খুঁজে আনব স্মৃতির আগুন।
দৃশ্য ৪: ওয়াইয়ার যাত্রা
(ওয়াইয়া মঞ্চে হাঁটে। তার চারপাশে গাছ, হরিণ, বাতাস ও নদী রূপে সজ্জিত শিশুরা হাজির হয়)
গাছ:
আমরা নিঃশব্দ… গান হারিয়ে গেছে।
নদী:
আমার স্রোত শুকিয়ে যাচ্ছে।
ওয়াইয়া:
আমার ভেতরে এখনো দাদির গান বাজে…
(গান শুরু করে — “স্মৃতির আগুন জ্বলুক চিরকাল…”)
দৃশ্য ৫: ছায়া সাপের গুহা
(মঞ্চের এক কোণে অন্ধকার। ছায়া সাপ আবার হাজির)
ছায়া সাপ (ফিসফিস):
তুমি একা। আগুন ফিরলে কষ্ট আসবে। আমার সঙ্গে থাকো।
ওয়াইয়া (দৃঢ়ভাবে):
আমি দাদির গান ভুলিনি! আমার আগুন আমি ফেরাব!
(ওয়াইয়া গায়)
“ভুলে গেলে ব্যথা বাড়ে,
গল্প জানলে আঁধার হারে!”
(আলো ফিরে আসে। ছায়া সাপ ছোট হতে হতে অদৃশ্য হয়)
দৃশ্য ৬: ফিরে পাওয়া আগুন
(আলো জ্বলে ওঠে। আগুন আবার কেন্দ্রে জ্বলে। সবাই খুশিতে নাচে)
দাদি (আবার গান গায়):
গল্প ফিরল, সুর ফিরল,
স্মৃতি আবার জ্বলে উঠল।
সবাই একসাথে:
আমরা আমাদের গান মনে রাখব।
আমরা আমাদের গল্প বলব।
আমরা স্মৃতির আগুন রক্ষা করব।
শেষ দৃশ্য: পর্দা পড়ে যাওয়ার আগে
ওয়াইয়া (মঞ্চের সামনে এসে):
বন্ধুরা, যেখানেই থাকো, মন খারাপ হলে কান পাতো—
হয়তো তুমি শুনবে স্মৃতির গান,
তোমার মধ্যেও সেই আগুন জ্বলছে।
সবাই গায়:
স্মৃতি হোক আলোর দীপ,
ভুলে গেলে অন্ধকার পাবে।
গল্পই শক্তি, গানই প্রাণ—
ওয়াইয়ার মত চল সবে!