দৃশ্য ১: প্রতিশোধের আগুন (শেখ হাসিনার মনের দ্বন্দ্ব)
স্থান: প্রধানমন্ত্রীর কক্ষ। একটি মঞ্চে দুটি বিশাল আয়না রাখা আছে। শেখ হাসিনা একা বসে আছেন, তার চারপাশে অন্ধকার। আয়নায় তার প্রতিচ্ছবি ভাসছে। তিনি নিজের প্রতিচ্ছবির সাথে কথা বলছেন।
শেখ হাসিনা (নিজের দিকে তাকিয়ে):
“ওহে আয়না, তুই কী জানিস কেমন করে একটি হৃদয় পুড়ে,
বুকের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে!
একটি দেশ, একটি প্রজন্ম—পিতার রক্তে রঞ্জিত,
তাদের থেকে কীভাবে ফিরে পাব সেই শান্তি?
এই ক্ষমতা, এই সিংহাসন তো প্রতিশোধের আগুনের ফল!
আমি কি তাদের মাফ করবো, যারা আমার পিতাকে কাঁদিয়ে নিল?
কিন্তু এ আগুন তো আমাকে পুড়ায়, পুড়ায় আমার দেশকে।
তবু কেন আমি চুপ থাকতে পারি না?
কেন প্রতিটি চোখ আমার উপর নজর রাখে?
কেন এই আয়না আমার পেছনে লুকিয়ে থাকা ছায়া দেখায়?”
(অন্য এক প্রতিচ্ছবি আয়নায় ভেসে ওঠে, যেন তা শেখ হাসিনার আত্মা।)
আত্মা (হাস্যোজ্জ্বল):
“ক্ষমতা চেয়েছ, পেয়েছো—কিন্তু কি পেয়েছ সত্যিকারের শান্তি?
তোমার প্রতিশোধ তো তোমার হৃদয়ে বেশি রক্ত ঝরায়।
তুমি কি ভুলে গেছ ভালোবাসার সেই আশ্রয়?
পিতার আদর্শ ছিল শিক্ষা আর ন্যায়ের প্রহরী,
তুমি কি ক্ষমতার নামে ভুলে গেছ সেই শিক্ষা?”
শেখ হাসিনা (গম্ভীর স্বরে):
“আমি ক্ষমতা চাইনি, আমি চাইনি রক্তের প্রতিশোধ,
কিন্তু প্রতিশোধ ছাড়া আর কেমন করে এ আঘাত মুছে দেব?
দেশ তো পিতার মতো আমাকে রক্তে ভাসিয়ে দিয়েছে।”
আত্মা:
“প্রতিশোধের আগুনে ভালোবাসার চারা কখনও বাঁচে না।
তোমার আগুন শুধু ছাই করবে সেই ভালোবাসাকে,
দেশের মানুষের হৃদয়ে তৈরি করবে ভয়, নয়তো ঘৃণা।
ভালোবাসা আর সম্মানেই বেঁচে থাকে সিংহাসন—
নজরদারি, গুম, আর চাপিয়ে দেওয়া আদেশে নয়।”
দৃশ্য ২: কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীর সাথে শেখ হাসিনার বিতর্ক
স্থান: আন্দোলনের মঞ্চ। একদল শিক্ষার্থী স্লোগান দিচ্ছে। শেখ হাসিনা তাদের সামনে এসে দাঁড়ান। এক নেতা এগিয়ে আসে।
শিক্ষার্থী নেতা:
“তুমি আমাদের কন্ঠ রুদ্ধ করতে চাও!
আমরা কি রাজাকারদের সন্তান, আমাদের অধিকার কি অস্বীকার করবে?
তুমি কি জানো আমাদের কন্ঠরোধ করে তুমি নিজেকেই দুর্বল করছো?
আমরা নতুন প্রজন্ম, আমাদের শিক্ষা ও অধিকার আমাদের প্রাপ্য।”
শেখ হাসিনা:
“তোমাদের আন্দোলন কী করে বুঝবে যে এই দেশকে রক্ষা করতে আমি কত রক্ত দিয়েছি!
আমার পিতা—তার রক্তে গড়া এই দেশ—তোমরা কীভাবে তার উত্তরসূরি হবে,
যদি দেশকে ভালোবাসতে না শেখো?”
শিক্ষার্থী নেতা (দৃঢ়স্বরে):
“আমরা ভালোবাসি দেশকে, কিন্তু ভালোবাসা শিখতে হয় শিক্ষায়,
স্বাধীনতা আসে সম্মান দিয়ে, না যে প্রতিশোধের আগুনে।
আমরা যদি তোমার কথায় মাটিতে মাথা নত করি,
তবে এ দেশ তো আর শিখবে না কোন দিন ভালোবাসার অর্থ!”
শেখ হাসিনা (ক্ষীণ কণ্ঠে):
“তোমাদের বিদ্রোহ কি ক্ষমার আশা করে, নাকি প্রতিশোধ?
তোমাদের চাওয়া কি শুধু শিক্ষা, না সিংহাসন দখল?”
শিক্ষার্থী নেতা (কঠিন চোখে):
“আমাদের চাওয়া দেশকে সত্যিকারের মুক্তি দিতে,
তোমার রাজত্ব তো ভয় দিয়ে শাসন করে, ভালোবাসা দিয়ে নয়।
যেখানে শিক্ষকরা শিক্ষাকে রক্ষা করে, সেখানে দেশ বেড়ে ওঠে,
আর যেখানে রাজনীতির ছায়া শিক্ষার ওপরে পড়ে, সেখানে ভালোবাসা মরে যায়।”
দৃশ্য ৩: পরিশেষ—শেখ হাসিনার অনুশোচনা
স্থান: পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর কক্ষ। শেখ হাসিনা একা বসে আছেন, আয়না ভেঙে গিয়েছে। কাঁচের টুকরো তাঁর চারপাশে ছড়িয়ে আছে। তিনি ভাঙা আয়নার দিকে তাকিয়ে আছেন।
শেখ হাসিনা (মৃদু স্বরে, নিজেকে লক্ষ্য করে):
“ভাঙা আয়না, ভাঙা স্বপ্ন—এই কি আমার উত্তরাধিকার?
আমার প্রতিশোধ কি তাদেরও ছিন্ন করেছে, যারা আমায় ভালোবাসতে চেয়েছিল?
আমি কি তাদের শত্রু বানিয়েছি, যারা হতে পারতো আমার আত্মার আশ্রয়?
ভালোবাসা যদি শিখতাম, তবে হয়তো এ আয়না এমন ভাঙতো না,
আর প্রতিশোধের আগুনে নিজেকে পোড়াতে হতো না।”
(আত্মার কণ্ঠ আবার শোনা যায়।)
আত্মা:
“প্রতিশোধের আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছো হৃদয়ের শান্তি।
এখনও সময় আছে, শেখ হাসিনা—ভালোবাসা দিয়ে শাসন করতে শেখো।
ফনতন্ত্র রক্ষা হয় শিক্ষায়, সম্মানে, আর ভালোবাসার বন্ধনে।
তুমি যা হারিয়েছো, তা ফিরে পাবে ন্যায় আর প্রেমে।”
শেখ হাসিনা (আত্মদ্বন্দ্বে):
“কীভাবে মুছবো এই রক্তের দাগ, কীভাবে ফিরিয়ে আনবো সেই শান্তি?
আমি কি পারবো ক্ষমার পথে হাঁটতে, পারবো শিক্ষা দিয়ে ভালোবাসাকে রক্ষা করতে?”
(আলো ক্রমে ম্লান হয়, শেখ হাসিনার মুখে গভীর অনুশোচনা।)
—
এই নাটকটির মাধ্যমে মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব, প্রতিশোধের আগুন, এবং সত্যিকারের নেতৃত্বের গুণাবলী নিয়ে প্রশ্ন। মূল বার্তা —শাসন এবং সমাজ গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব, ক্ষমার শক্তি, এবং ভালোবাসার অপরিহার্যতা।