জুলাই ৩০, ২০২৫
দুঃখজনক বাস্তবতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একটি কথা:
সেদিন দুপুর দুটো নাগাদ আমি ব্রঙ্কসে বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম, আমার স্ত্রীকে তার স্কুল থেকে নিয়ে আসার পথে।
হঠাৎ দেখি হোয়াইট প্লেইন্স রোড ওভারপাসের কাছটা জ্যামে ঠাসা। প্রচুর পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদের বাইরে। লাইট জ্বলছে, কিন্তু সাইরেন নেই। আশপাশটা অদ্ভুত শান্ত। কিছু পুলিশ সদস্য ওভারপাস পার হয়ে তাদের গাড়ির দিকে ফিরছিলেন। কারও মুখে ক্লান্তি, কারও চোখে একরাশ বেদনা। মনে হচ্ছিল, কোনো জানাজার পর সবাই ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু জানতাম না, কার জন্য এই ভিড়।
রেডিওতে হঠাৎ খবর এলো—
“৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে সুনামির আশঙ্কা… লোকজনকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হচ্ছে…”
ভূমিকম্প। সুনামি। পুলিশ। একসাথে দুই বিপর্যয়ের খবরে আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছিল।
ঠিক তখনই আমার ফোন বাজল—
শামীম বলল,
“নাসির, এখনও যদি বাসায় থাক, তবে আর বের হবার দরকার নাই, কারণ গত পরশু দিন মিডটাউনে যে গুলির ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ মারা গিয়েছিল তার জানাজায় প্রায় পাঁচ হাজার পুলিশ এসেছে, ফলে ব্রঙ্কসে ভয়াবহ ট্রাফিক, অনেক খারাপ অবস্থা। আমি এইমাত্র খবরেই শুনলাম।”
“আমি আলরেডি ট্রাফিক এ, ফেরার উপায় নাই, তাছাড়া এখন অনেক বৃষ্টি, বাসে ট্রেনে আসতে আসতে তুমি কাক ভেজা হয়ে যাবা! “ আমি বললাম।
সবকিছু তখন মিলিয়ে গেল মাথায়।
নিঃশব্দতা। জানাজা নামাজের ভিড়। পুলিশের শোকাবহ চাহনি।
যে মানুষটিকে দাফন করা হয়েছে, তিনি একজন বাবা ছিলেন। একজন রক্ষক। যিনি সেদিন নিজের জীবন দিয়ে অন্যদের বাঁচিয়েছিলেন।
আর যে খেলোয়াড় গুলি করে এই সবকিছু শুরু করলেন—তিনি নিজেই দীর্ঘদিন ধরে ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ছিলেন। কারও কাছে যাননি। নিজের যন্ত্রণাকে কখনও শব্দে প্রকাশ করেননি। ডাক্তার সাহায্য করতে চাইলে, তা প্রত্যাখ্যান করেন, অন্য সফল খেলোয়াড়দের দায়ী করাকেই পছন্দ তার। সেই নিঃশব্দ যন্ত্রণা একদিন বিস্ফোরণ হয়ে উঠল—ছড়িয়ে পড়ল, কেড়ে নিলো নির্দোষ প্রাণ।
আর একটি কথা:
আমরা ভাবি, ট্র্যাজেডি আসে চিৎকারে—সাইরেন, গুলির শব্দ, বিস্ফোরণে।
কিন্তু কখনও কখনও তা শুরু হয় নিঃশব্দতায়।
কাউকে না বলার মধ্য দিয়ে।
যারা পাশে থাকলেও বুঝতে না পারার মধ্য দিয়ে।
আমাদের চুপ করে থাকায়, যখন কী বলব বুঝি না।
সেদিন আমি শুধু একট জ্যাম দেখিনি।
আমি দেখেছিলাম হারানোর ভার।
একটি শহরের নিঃশব্দ শোক।
একটি পরিবারের দীর্ঘশ্বাস—যাদের প্রিয় মানুষটি আর কখনও ফিরে আসবে না।
যন্ত্রণা যদি বলা না হয়, তা আরও যন্ত্রণার জন্ম দেয়।
মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বলতা নয়—বরং সত্যিকারের শক্তির দাবি রাখে।
আর নিঃশব্দ সাহস, কারও জীবন বাঁচাতে পারে—even যদি সেই মানুষটি তা দেখে যেতে না পারেন।
তাই আজ, যদি আপনি কষ্টে থাকেন—একবার বলুন।
যদি কারো মুখে নীরবতা দেখেন—জিজ্ঞেস করুন।
আর যদি কখনও ভুলে যান, সাহস কেমন দেখতে—
মনে রাখবেন সেই ওভারপাস পার হওয়া পুলিশের দীর্ঘ সারি, যারা বিদায় জানিয়েছিলো তাদের এক নীরব নায়কের।