🎭পার্কটা চুপ করে থাকে…

Pelham Bay Park–এর ভৌতিক কিংবদন্তি নিয়ে লেখা একটি বাংলা দ্বৈত মঞ্চ সংলাপ (duet stage monologue)—যেখানে দু’জন চরিত্র: একজন অবিশ্বাসী (সন্দেহপ্রবণ) ও একজন বিশ্বাসী (অভিজ্ঞ) ভূতের গল্প নিয়ে বিতর্ক করে।

🎭 নাটকের নাম: “পার্কটা চুপ করে থাকে…”

চরিত্র:

রানা: (অবিশ্বাসী) আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, যুক্তিবাদী। মুনা: (বিশ্বাসী) কল্পনাপ্রবণ, অনুভূতিপ্রবণ, পার্কের আশেপাশে বড় হয়েছে।

মঞ্চ ভাবনা:

হালকা কুয়াশা। পেছনে গাছের ছায়া। মাঝে একটা কাঠের বেঞ্চ বা গাছের গুঁড়ি। দুই বন্ধু হাঁটতে হাঁটতে গল্প করছে।

[মুনা ও রানা প্রবেশ করে, হাঁটতে হাঁটতে থামে।]

মুনা (কথা শুরু করে ধীরে):

তুই জানিস, এই পার্কটা রাতে জেগে ওঠে?

রানা (হেসে):

আরে ধুর! আবার ভূতের গল্প শুরু করলি? এটা তো নিউ ইয়র্ক, না যে বাঁশবনের মাঝখানে কোথাও।

মুনা (গম্ভীর হয়ে):

নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে বড় পার্ক এটা। Pelham Bay Park। যত বড় জায়গা, তত বেশি ইতিহাস। আর যত বেশি ইতিহাস… তত বেশি ছায়া।

রানা:

ছায়া মানে? ও, গাছের ছায়া?

মুনা (অল্প হেসে):

না রে। Split Rock Road-এর পাশে একজন মেয়ে ঘোড়ায় করে বারবার আসে। নাম Abigail। ১৭৭৭ সালে দেশপ্রেমিকদের জন্য বার্তা নিয়ে যাচ্ছিল। ব্রিটিশরা তাকে মেরে ফেলে। সে আজও আসে। মেসেজটা পৌঁছায় না তো!

রানা (বিদ্রুপ করে):

ঘোড়ায় চড়ে আসে? এখন তো Uber আছে!

মুনা (উত্তেজিত হয়ে):

আমি নিজের কানে শুনেছি রে! ঘোড়ার টগবগ আওয়াজ। কারও পায়ের ছাপ নেই, অথচ চারদিকে পাতাগুলো কাঁপছিল।

রানা (চোখ উল্টায়):

তোর কানে তখন হেডফোন ছিল না তো?

মুনা (নিচু গলায়):

Bartow-Pell Mansion-টা জানিস? মিউজিয়াম হলেও ওখানে পিয়ানো বাজে রাত্তিরে। অথচ ওটা তালা দেওয়া থাকে।

রানা (উত্তরে):

সাউন্ড সিস্টেম হবে পুরোনো, ভুতুড়ে অ্যাম্বিয়েন্স! প্রোমোশনাল গিমিক!

মুনা:

তোর skepticism একটা গিফট, বুঝি। কিন্তু ওই ম্যানশনে গাইডরা বলে—সিঁড়িতে নাকি একজন পুরোনো টাইমের লোককে দেখা যায়। তারপর সে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আর ট্যুরিস্টরা বলে—হঠাৎ মাথা ঘোরে, গা ছমছম করে।

রানা:

হা হা! তাহলে পার্কে একটা “Haunted House” খুলে ফেল! লাইন পড়ে যাবে!

মুনা (নিঃশ্বাস ফেলে):

তুই হাসিস… কিন্তু Twin Island-এ ওইদিন আমি ছোট বাচ্চাদের হাসি শুনেছিলাম। নিচে গিয়ে দেখি—একটাও ছায়া নেই। শুধু পানির ঢেউ, আর শূন্যতা।

রানা (একটু থেমে):

তুই তো আগেও বলেছিলি… ১৯০৪ সালে নাকি একটা নৌকা ডুবে গিয়েছিল?

মুনা (ধীরে):

হ্যাঁ… বাচ্চারা ডুবে যায়। কেউ কেউ ভাবে, ওরা আজও খেলে… ঢেউয়ের পাশে।

(একটু থেমে)

আরেকবার, আমি স্রেফ হাঁটছিলাম। এক জায়গায় গিয়ে দেখি… সব পাখির ডাক থেমে গেছে। এমন নিঃস্তব্ধতা, যেন বাতাস নিজেই ভয় পেয়ে গেছে। তারপর সেই আওয়াজটা—কানে কানে কেউ ফিসফিস করছে।

রানা (আর হাসছে না):

তুই সিরিয়াসলি ভয় পেয়েছিলি?

মুনা (চোখে তাকিয়ে):

ভয় না… ওটা ছিল একধরনের স্মৃতি। যেন কেউ জায়গাটার ভেতর থেকে বলছে—“তোমরা ভুলে গেছো… কিন্তু আমরা এখানেই আছি।”

রানা (ধীরে):

তোরা যারা পার্কের আশেপাশে বড় হয়েছিস, হয়তো জায়গার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। অতীতের সাথে একটা… সংযোগ।

মুনা (চুপচাপ মাথা নাড়ে):

তুই বিশ্বাস না করলেও… আমি জানি, Pelham Bay Park চুপ করে থাকে। কিন্তু যখন জেগে ওঠে, তখন কেউ শুনে না—শুধু অনুভব করে।

(আলো ধীরে নিভে আসে, তারা দু’জন চুপ করে থাকে।)

🎭 ২ লাইভ থেকে লাস্ট।

এই পর্বে, রানা (অবিশ্বাসী) এবং মুনা (বিশ্বাসী)–র আলোচনার মধ্যে হঠাৎ তৃতীয় চরিত্র “জ্যাকি” (YouTube Ghost Hunter) হাজির হয়, এবং সে লাইভ ভিডিও করতে করতে অদৃশ্য হয়ে যায়।

(একটি আধুনিক ভূতুড়ে থ্রিলার-নাটক, 3 চরিত্র)

চরিত্র:

রানা – অবিশ্বাসী, আধুনিক, যুক্তিবাদী মুনা – বিশ্বাসী, অনুভূতিপ্রবণ জ্যাকি – ইউটিউব ঘোস্ট হান্টার (স্মার্টফোন হাতে, লাইভ স্ট্রিমে ব্যস্ত)

[মঞ্চ: মুনা ও রানা পার্কের গা ছমছমে কোনায় কথা বলছে।]

রানা:

তুই আমাকে ভয় দেখাতে চাইছিস বুঝি? পাখির ডাক বন্ধ হয়ে গেলেই ভূতের গল্প শুরু?

মুনা:

সব জায়গায় ভূত না থাকে, কিন্তু কিছু জায়গা… অনুভব করিয়ে দেয়—তুই একা না।

[হঠাৎ দূর থেকে মোবাইলের আলো। কেউ ফোনে লাইভ ভিডিও করছে। শব্দ আসে—“Smash that like button if you wanna see me enter the haunted woods of Pelham Bay Park!”]

জ্যাকি (উত্তেজনায়):

Yo yo yo! GhostFam, what’s up! আমি এখন আছি সেই ber-famous Split Rock-এর পাশে। মুনা! তুই এখানেই ছিলি না?

মুনা (চমকে):

জ্যাকি? তুই এখানে কী করছিস?

জ্যাকি:

লাভ এসেছিলাম লাইভ হান্ট করতে! নতুন ভিডিওর টাইটেল হবে: “Whispers of the Bay – Ghost Hunt Gone Wrong?” Sounds juicy, right?

রানা (হেসে):

এই ছেলে-টেলে মানুষগুলা এইসব চ্যানেল করে শুধু ক্লিকের জন্য ভূতের গল্প বানায়।

জ্যাকি (চোখ বড় করে):

এত ঘোর অপমান! আমি কিন্তু কাল Bartow-Pell Mansion-এর পিয়ানো বাজার আওয়াজ ক্যাপচার করছিলাম। ক্লিপ ইউলোড করবো কাল!

মুনা (নরম স্বরে):

তুই সাবধানে করিস, জ্যাকি। এখানে গল্প আর বাস্তবের মাঝখানে তফাত বোঝা যায় না সব সময়।

জ্যাকি (মজার ছলে):

Relax! আমার কাছে ইনফ্রারেড ক্যামেরা, এএম রেকর্ডার, স্পিরিট বক্স সব আছে। ভূতেরাও ভয় পাবে!

[জ্যাকি স্মার্টফোনে মুখ করে বলে:]

Alright guys, এখন আমি একা যাচ্ছি ওই পাথরের দিকে—যেখানে Abigail-এর প্রেতাত্মা নাকি ঘোড়ার শব্দ করে!

[আস্তে আস্তে সে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যায়, ফলো স্পট তার ওপর থাকে যতক্ষণ না সে মিলিয়ে যায়। তার কণ্ঠ শোনা যায় লাইভ থেকে:]

জ্যাকি (মুঠোফোনে):

Wait… এটা কী? কেউ হাঁটছে পেছনে?

(ঝিরঝির আওয়াজ, মোবাইল লাইভ স্ক্রিন গ্লিচ করে)

জ্যাকি:

Guys… are you seeing this?

(হঠাৎ ভয়াবহ চিৎকার)

জ্যাকি:

“না…আআআআআ…”

[আলো নিভে যায়। মোবাইল আলো পড়ছে শুধু মাটিতে, ক্যামেরা নিচে পড়ে আছে। পেছনে পাতার শব্দ, ফিসফাস, এবং দূরের ঘোড়ার টগবগ আওয়াজ।]

[রানা ও মুনা এগিয়ে আসে আলোতে, জ্যাকি আর নেই।]

রানা (গলা কাঁপে):

সে তো সামনে গেল… এভাবে গায়েব হয়ে গেল কীভাবে?

মুনা (চোখে জল):

আমি বলেছিলাম না… কিছু জায়গা শুধু শোনার জন্য না… সম্মান করার জন্য।

[মঞ্চ ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়। শেষ দৃশ্য: মোবাইল স্ক্রিনে ঝাপসা লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়: এক কুয়াশার মধ্যে জ্যাকির চেহারা—চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ বন্ধ।]

🎭 ৩ দৃশ্যের নাম: “গাছগুলো আমাকে চেনে”

চরিত্র:

মিনিহাহা খালা (৭০+), বহু বছর ধরেই পার্কের আশেপাশে বাস করছেন। তাঁর স্মৃতি, ভয়, ও অভিজ্ঞতা মিশে গেছে পার্কের সঙ্গে।

[মঞ্চ: একটি পুরোনো কাঠের চেয়ার। ঝিমঝিম আলো। বৃদ্ধা চরিত্র (মিনিহাহা খালা) একা বসে আছেন, সামনে দর্শকদিকেই তাকিয়ে বলেন, যেন কেউ তার সঙ্গে গল্প শুনছে।]

মিনিহাহা খালা (নরম গলায় শুরু করেন):

তোমরা এখন মোবাইল টিপে ভূতের খোঁজ করো… আর আমরা খুঁজতাম ঠাকুরমার ঝুলিতে।

আমার বয়স তখন দশ কি বারো। ঠিক এই পার্কের পেছনে ছোট্ট এক কুঁড়ে ঘরে থাকতাম মায়ের সঙ্গে। রোজ বিকেল হলে মায়ের কথা ছিল—“সূর্য ডোবার আগে ফিরে আসিস। গাছগুলো সন্ধ্যার পর অন্যরকম হয়ে যায়।”

আমি ভাবতাম, এ তো শুধু গাছ। কী করবে গাছ?

(একটু থামেন, নিঃশ্বাস নেন)

একদিন ফিরতে দেরি হয়ে গেল। বড় গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে দেখি এক বুড়ি মহিলা—সাদা শাড়ি, পা দেখা যায় না। হাসছেন, ডেকে বললেন, “এই মেয়ে, ঘরে যাবি না?”

আমি বললাম, “আপনি কে?”

তিনি বললেন, “আমি তো তোর পাশেই থাকি… গাছের ভেতরে।”

(চোখ বড় করে বলেন)

আমি দৌড় দিলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে কাঁপছিল হাত-পা।

পরের দিন গিয়ে দেখি… ওই জায়গায় একটা পাথর। আর পাথরের নিচে জ্বলছে ধূপকাঠি।

(একটু নরম সুরে)

সেই থেকে বুঝেছি, Pelham Bay Park শুধু একটা পার্ক না। এটা একটা বই—যার পাতায় পাতায় শোনা যায় হারিয়ে যাওয়া কণ্ঠ, পুরোনো গল্প, আর না বলা বিদায়।

তখন তো এদিকে অনেক Siwanoy আদিবাসী গোষ্ঠীর কবর ছিল। আমরা ছোটরা জানতাম, গাছ নাড়ালে কান্নার শব্দ আসে।

(আঁচল ঠিক করেন)

তুমি যদি আজকেও গভীর রাতে ওই Split Rock-এর পাশে কান পেতে দাঁড়াও, শুনতে পাবে—একজন মেয়ে দৌড়ে যাচ্ছে, ঘোড়ার টগবগ শব্দে চাপা পড়ে যাচ্ছে তার নিঃশ্বাস।

আর যদি Bartow-Pell Mansion-এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকো—কেউ হয়ত তোমার কানে বলবে, “আমরা এখনও এখানে আছি।”

(হঠাৎ থেমে যান। দর্শকের চোখে চোখ রাখেন)

তোমরা যারা বিশ্বাস করোনি, তারা হাসবে।

কিন্তু যারা দেখেছে… তারা চুপচাপ হেঁটে চলে যায়। গাছগুলোর দিকে না তাকিয়ে।

আমি? আমি এখন কথা বলি গাছদের সঙ্গে।

ওরা আমায় চেনে।

🎭 [আলো ধীরে নিভে আসে, বৃদ্ধা চেয়ারেই বসে থাকেন, মুখে হালকা এক রহস্যময় হাসি]