মহিকণ্টক এর বাঙলা কবিতা

নিউইয়র্ক শহরের  হাডসন নদীর আদি নাম মহিকণ্টক। ‘মহিকন্টক’ আমেরিকার এলগোনকুইআন নামক আদিবাসীদের ভাষা-অন্তর্গত শব্দ। অনেকে মনে করেন এটা মোহক অথবা মহিকান নামক গোত্রের মানুষের ভাষা-অন্তর্গত শব্দ যারা উত্তর আমেরিকার আদিবাসী। আমেরিকান সমাজ দেখার, এবং বাংলা সংস্কৃতির সেতুর সাথে যুক্ত থাকার আকাংখা আর ভালবাসার ফসল ‘মহিকন্টক’। মহিকণ্টকের কবিতা:

1. দাউ দাউ দাবানল নয় আশার আলো দাও আমার সামনে থেকে তুমি অন্ধকার সরাও দাউ দাউ দাবানল নয় আশার আলো দাও আগুন দিও না বন্ধু আশার আলো দাও  আমার সামনে থেকে তুমি অন্ধকার সরাও দাউ দাউ দাবানল নয় আশার আলো দাও দুঃখ ধরার ভরা স্রোতে আনন্দ মেলাও আমার সামনে থেকে তুমি অন্ধকার সরাও দাউ দাউ দাবানল নয় আশার আলো দাও আমার সামনে থেকে তুমি অন্ধকার সরা আমার সামনে থেকে তুমি অন্ধকার সরাও অন্ধকার সরাও, অন্ধকার সরাও, …

2. নতুন শব্দ সৃষ্টি করাই বোধ হয় কবিত্ব  শব্দকে নতুন অর্থ দেয়া হয়ত নতুনত্ব। 

3. সৃষ্টির নিয়ম নাই, সৃষ্টি করতে পারি যা খুশি তাই, সিমা নাই চিহ্নিত, সৃষ্টিধর বলে তাই, নিদর্শনের শেষ নাই ।  প্রকাশিত বইয়ের পৃষ্ঠায় নাই, বাক্যের ভাজে নাই, শব্দের চিবুকে নাই, বর্নমালার গায়ে নাই। কবিতায় তাই লিখে যাই, সৃষ্টির নিয়ম নাই, সৃষ্টি করতে পারি যা খুশি তাই, প্রতিটি সমাধান যখন অস্থায়ী। যখন কমে না ব্যাধি, অসুখ যায় বেড়ে, তখন কবিতায় লিখে যাই, আর কিছু না চাই, আমি তোমায় পেতে চাই।

4. যখন সৃষ্টি করার সময় ছিল না, তখনই সৃষ্টি হয়েছিল  অসম্ভব সুন্দর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি খানা।  যখন দৃষ্টি ফেলার সময় থাকে না, তখনই যায় দেখা অসম্ভব সুন্দর শ্রেষ্ঠ দিন খানা।

5. সময়ের গাড়ি চলে, ভবিষ্যতে; নতুন থেকে নতুনত্বে, অচেনা পথে ভবিষ্যত প্রৌঢ়ত্বে; বর্তমান যাচ্ছে, যেতে যেতে যেতে যেতে, বৃদ্ধাঙ্গুলি তুলে-  না ফেরা ভবিষ্যতে, নতুনত্বে, সময়ের গাড়ি চলে, অচেনা পথে সময়ের গাড়ি চলে, ভবিষ্যতে; নতুন থেকে নতুনত্বে, অচেনা পথে সময়ের গাড়ি চলে, না ফেরা ভবিষ্যতে; প্রতি মুহূর্তে, নতুন থেকে নতুনত্বে  সময়ের গাড়ি চলে; নতুন থেকে নতুনত্বে, নতুন থেকে নতুনত্বে, নতুন থেকে নতুনত্বে   ভবিষ্যত প্রৌঢ়ত্বে; বর্তমান যাচ্ছে, যেতে যেতে যেতে যেতে, বৃদ্ধাঙ্গুলি তুলে-  না ফেরা ভবিষ্যতে, নতুন তত্ত্বে বে, সময়ের গাড়ি চলে, অচেনা পথে

6. গ্যারাজ ব্যান্ড সেট আপে, ই এ ডি জি বি ই গিটারে – সি ডি ই এফ জি এ বি সি মেজর স্কেলে,  সকালের চায়ের কাপ এখনও টেবিলে, ধুয়া উঠে রেডিওতে, গিটারের ইস্ট্রিং এ, ঝ্যান ঝ্যান যায় বেজে, হাই ফ্রিকয়েন্সি হর্ন, বাজে আজে বাজে নাগরিক কথন;  হাই ফ্রিকয়েন্সি হর্ন,  কোনো এক জায়গায় টিউনিং ভাঙ্গে, একই কর্ড হাতে, তাতে কি হবে, টিউনিং ভাঙ্গে, সকালের চায়ের কাপ এখনও টেবিলে,  ধুয়া উঠে রেডিওতে, গিটারের ইস্ট্রিং এ, বাজেনাই একসাথে, ঝুঝেচি আলসেমিতে অন্ধকার খাদে বুঝেছি কবি মাতে যখন আলসেমিতে, হারায়ে যায় লাইন অন্ধকার খাদে ; অনেক কবির মতন, চুরি হয়েছে অনেক লাইন আমারও কবিকে লিখতে দাও কবিতা গুচ্ছ কতক কবিতা না লিখলে কবি হবে কবিতার ঘাতক।

7. সকল কবি ভালবাসে নিজস্ব ভাষাতে, সঙ্কীর্ণতা নাই আজ কোনও ভাষাতে।  বুনন হয় সবার ভাষা বাংলা ভাষার সাথে। ফেব্রুয়ারীর একুশ তারিখ প্রভাত ফেরিতে ;  সকল কবি ভালবাসে নিজস্ব ভাষাতে নিজস্বতা টিকে থাকে সকল ভাষাতে। হেটে যাব দুরে, ধুলা ভর করে, চোখ মাটির দিকে, অসচ্ছতা নাই কোন নতুন মতে বা পথে; নিজস্বতা টিকে থাকে সকল মত পার্থক্যে,ভাবনারা ছায়া পথে, সম্মান দিয়ে শিখতে হয় ভিন্ন মতে সকল কবি ভালবাসে নিজস্ব ভাষাতে।

8. তোমার মুখ নিস্তব্ধ আমার মুখের মত,  তোমার কাছে জমা আছে আকাংখা যত,  আমার কাধের পর আছে রক্ত রঙ্গীন ক্ষত,  তোমার মুখ নিস্তব্ধ আমার মুখের মত।  ব্রুক্লিন থেকে ব্রঙ্কস পর্যন্ত, দেখতে পার সুন্দরের আর অসুন্দরের প্রতিফলন কত, ইস্ট রিভার নদীর পাড় বিচিত্র জাতিসংঘ!  তোমার মুখ নিস্তব্ধ আমার মুখের মত। হারায়ে জল শুকায় যে নদী, আমি তার মত।  তার চেয়েও হয়ত আমি হয়েছি বেশি আহত, সময়ের চাকায় যাই গড়ায়ে প্রতিমুহুর্ত  তোমার মুখ নিস্তব্ধ আমার মুখের মত।

9. অভিমান এর অনেক রূপ,  কখনও কুৎসিত ঝগড়া,  কখনও ফাটা ফাটি,  কখনও কথা কাটা কাটি,  অভিমান এর অনেক রূপ,  কখনও জটিল রসিকতা,  কখনও খুনা খুনি, কখনও যুদ্ধ।  নিরবতা। অভিমান এর অনেক রূপ,  অভিমান এক ধরনের ভাষা।  ভালবাসার আর এক দশা।

10. বিনয় একটা নদীর মত, নাই কোন ক্ষত। আছে শুধু ব্রহ্মে বিচরণ করার আনন্দ।  ধৈর্য ধরা মানে নয় সময় নষ্ট করো। বিন্দু বিন্দু পিতৃধনও, সময় ও স্রোত। ঊংডে য়াহ হো, নাই কোন ক্ষত। বিনয় একটা নদীর মত, মহত্তের দাবিদার লোকজন ধৈর্য ধরো। এই বিনয় নদীর মত। হও বিনীত। ঊংডে য়াহ হো।

11. হাডসন নদীর রূপ দেখে মনে পরে, বংশী নদীর কালো পানি সাভারে। জট দেখেছি গাছে বটের শিকড়ে, সন্ধ্যা রাতে নদীর কুলে হাওয়া,  নৌকা করে ঘুরতে যাওয়া আহারে, হে নদী আমি ভালবাসি তোমারে। আমার মতো করে কে চেনে তোমারে, নিউ ইয়র্ক শহরে। 

12. মাহিকন্টক: নাবিক হেনরি হাডসন যখন আমেরিকায় আসে ১৬০৯ সালে তখন এই নদীর নাম সে মহিকণ্টক বলেই জানে। এলগোনকুইআন (মোহক) ভাষায় মহিকণ্টক অর্থ দুই দিকে প্রবাহিত নদী। একই নদী তে লবনাক্ত ও মিষ্ট পানির প্রবাহ। জোয়ারের সময় লবনাত্মক আটলান্টিকের পানি ম্যানহাটনের দক্ষিণ থেকে প্রবাহিত হয়ে উত্তরে অবস্থিত নিউ ইয়র্কের রাজধানী আলবানী’র ট্রয় উপনগর পর্যন্ত যায়। আর উত্তরে আডিরন্ডক পাহাড় অবস্থিত হাডসন নদীর উৎসস্থল থেকে প্রবাহিত হয় সতেজ পানি আটলান্টিক অভিমুখী সব সময়। মহিকণ্টক একটি নদী। মাহিকন্টক একটি নদীর নাম, এই নদীর দেহ হরিনের চোখের মত স্বচ্ছ,! ইতিহাসের সব নদ নদীর অবাধ গতিময়তা হরণ করে নেচে নেমেছ পাহাড়ী খাদ ধরে আডিরন্ডেক পাহাড় থেকে।  নিউ ইয়র্ক আর নিউ জার্সি রাজ্যের সীমান্তে  দুইমুখি স্রোতে টানা পোড়েন চলে নদীর জলে! পরিচিত এই নদী প্রিয় অতি সবার কাছে মাহিকন্টক নাম জেনেছিল মোহক জাতি। (মহিকণ্টকের কবিতা)